হাবিবুল্লাহ মিজান,সম্পাদক, অল ক্রাইমস টিভি
ছাত্র জীবনে রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে অনার্স পড়তেন মেধাবী পুলিশ অফিসার হিসাবে একাধিকবার বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ পদক পাওয়া সিআইডির ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম।
কিছুদিন কলেজে শিক্ষকতা করে পরে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের সেবায় যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে বন্ধুরা মিলে থাকতেন পুরাতন ঢাকার মেসে। কিন্তু সরকারের উচ্চপদে যোগ দিয়েও ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম ভুলে যাননি মেসের সেই অসহায় বুয়াদের,যাঁদের হাতে রান্না খেয়েই ছাত্রজীবন শেষ করেছেন।
ডেকে ডেকে কোন ধরনের প্রতিদান না নিয়েই সেই অসহায় বুয়াদের যোগ্য সন্তানদের বিভিন্ন চাকুরির ব্যবস্থা করেছেন বলে জানা গেছে।
তিনি সুনামের সাথে এডিসি ট্রাফিক মতিঝিল, ডিসি ট্রাফিক উত্তর, এসপি নেত্রকোনা, এসপি নারায়ণগঞ্জ, ডিসি মতিঝিল, ডিসি এস্টেট, ডিসি ডিবি, জয়েন্ট কমিশনার( ক্রাইম) হিসাবে সুনামের সাথে কাজ করে এখন ডিআইজি হিসাবে সিআইডিতে কর্মরত।
তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে এমন একটা দিন নেই যে দিনে তাঁর নিজের জেলা নড়াইল থেকে থেকে গরীব, অসহায় এবং নির্যাতিত কোন মানুষ তাঁর সাহায্য নিতে আসেন নাই।
এলাকার অস্বছল ছেলে-মেয়েরা স্কুল,কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না। আর কোন উপায় না পেয়ে চলে আসেন তাঁর কাছেই। বিদেশে যাওয়ার নাম করে দালাল টাকা মেরে দিয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে সেই নড়াইলের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সাহায্যের জন্য নড়াইলের লোহাগড়ার সন্তান শেখ নাজমুলের কাছেই ছুটে আসেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও অসহায় মানুষগুলোর সব সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শুনে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেন সাদা মনের এই সিনিয়র পুলিশ অফিসার ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম।
এমন একটি ঘটনার বর্ননা দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে সাবেক ছাত্র আবু নাসের ডিটু বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তাঁর মেসে যে বুয়া রান্না করতেন,একদিন দেখি খুঁজে খুঁজে রাজধানীর শনির আঁখড়া থেকে সেই বুয়াকে এক পুলিশ কনস্টেবলকে দিয়ে ডেকে এনে তাঁর অফিসে বসিয়ে নিজের হাতে নাস্তা করাচ্ছেন। তাঁর পরিবারের খোঁজ নিচ্ছেন। বুয়ার সন্তানদের কেউ চাকুরী যোগ্য আছেন কিনা জেনে তাঁর সন্তানদের চাকরীর ব্যবস্থা করেছিলেন।
ছাত্রজীবনে যেসব শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট শিক্ষক ছিলেন,খুঁজে খুঁজে সেই ছাত্রদের বের করে কারো কোন সমস্যা আছে কিনা খোঁজ নিতেন। অনেকের চাকরীর ব্যবস্থাও করতেন।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য এতিমখানায় গোপনে সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য সহযোগিতা করেন,ঈদ বোনাসের টাকা দিয়ে শিশুদের ঈদ উপহার কিনে পাঠান। ডিআইজি শেখ নাজমুল আলমের দীর্ঘদিনের পরিচিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আরেক ছাত্র এই প্রতিবেদককে জানায়, বহু গরীব ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন ক্লিন ইমেজের এই পুলিশ অফিসার।
তিনি আরেকটি ঘটনার বর্ননা দিয়ে বলেন, একদিন দেখি ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে তৎকালীন জয়েন্ট কমিশনারের (ক্রাইম) অফিস কক্ষে নেত্রকোনা থেকে একজন রিক্সা চালক অল্প কিছু লেবু,একটা মিষ্টি কুমড়া, কিছু সবজি নিয়ে হাজির। মলিন চেহারা,পরনে ময়লা লুঙ্গি। অফিসে ঢুকেই জয়েন্ট কমিশনারকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
পরে জানতে পারলাম জয়েন্ট কমিশনার ( ক্রাইমস) শেখ নাজমুল আলম যখন নেত্রকোনার এসপি ছিলেন, তখন সেই অতি দরিদ্র রিক্সা চালকের ছেলেকে বিনা পয়সায় পুলিশে চাকরী দিয়েছিলেন। ভদ্রলোকের কাছে উনি যেন সাক্ষাৎ দেবতা।
এরকম বহু গরীব মানুষের মেধাবী ছেলে-মেয়েদের ডেকে এনে বিনা পয়সায় চাকরী দিতেন আজকের ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম।
উনার দূরদর্শিতার আরেকটা উদাহরন দিয়ে তাঁর আরেক ঘনিষ্ঠ ব্যাক্তি বলেন, শেখ নাজমুল আলম নারায়নগঞ্জের খুবই জনপ্রিয় এসপি ছিলেন। সেখান থেকে ডিএমপিতে বদলী হয়ে এলেন। ডিএমপিতে দেখতাম উনার অফিসে সাংসদ শামীম ওসমান সাহেবই শুধু আসতেন না, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভিও আসতেন। সবাই বলতেন শেখ নাজমুল আলম সাহেব বড় ভালো মানুষ।