একদিন পরই রমজান শুরু। ইতোমধ্যে বাজারে চিনি, তেল, খেজুর, ছোলাসহ রোজা-সংশ্লিষ্ট সব পণ্যের দাম বেড়েছে। আজকের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশে এযাবতকালের সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। হাতিরপুল বাজারে ব্রয়লারের দাম ২৮৫ থেকে ২৯০ টাকা।
বুধবার (২২ মার্চ) সকালে হাতিরপুল মুরগি বাজারে বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, কাল না হলেও পরশু থেকে রোজা শুরু। নিম্নেয়ের মানুষেরা যা-ও একটু ফার্মের মুরগি খেতাম, সেটাও এই রোজায় হয়ত সম্ভব হবে না।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা সাইফুল আলম বলেন, ‘গোশত কিনি না অনেকদিন। রমজানের কারণে আজ একটা ফার্মের মুরগি কিনতে চেয়েছিলাম। গত সপ্তাহেও দাম ছিল ২৫০ টাকা। আজ দোকানি বলছে ২৮৫ টাকা। কীভাবে কিনবো?’
কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিজান হাওলাদার বলেন, ‘মাসের শেষ এখন। মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নেই। অথচ সব জিনিসের দাম বেশি। প্রতিদিন বাড়ছে দাম, দেখার কেউ নাই।’
ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা শামীম আহমেদ বলেন, ‘গত সপ্তাহেও ২৫০ বা ২৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। আজকে ২৮৫ থেকে ২৯০ টাকা বিক্রি করছি। দাম যতই বাড়ুক বা কমুক, আমাদের কেজি প্রতি লাভ ১০ থেকে ১৫ টাকা। যারা দাম বাড়ায়, তারা একটা সিন্ডিকেট। তাদের ধরেন।’
নিউ মার্কেটে কথা হয় একজন স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে। কামরুল ইসলাম নামের এই শিক্ষক বলেন, ‘সীমিত আয়ে কোনমতে চলছি। রোজার বাহানায় বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। দাম বেশি হওয়ায় গরু-খাসির মাংস অনেকদিন কিনি না, এবার মুরগির মাংসও খাওয়া বন্ধ করতে হবে।’
এদিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। যা মুরগির দামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গত শুক্রবারেও প্রতি কেজি বয়লার বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি বয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এছাড়া সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৩৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি (লাল) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, দুই দিনের বৃষ্টিতে হঠাৎ ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কম, তাই দাম বেড়েছে। তাছাড়া একদিন পর রমজান, এটাও একটা কারণ। তবে বেশ কিছু দিন ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়তি। পাইকারি বাজারেও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। এর আগে কখনও এত দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেননি বলেও স্বীকার করলেন বিক্রেতারা।
হাতিরপুল বাজারে ব্রয়লার মুরগির বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, ‘গত শুক্রবার থেকে ব্রয়লারের দাম আবার বেড়েছে। আমরা পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে কিনছি। গত দুই দিনে বৃষ্টি ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। তাছাড়া ব্রয়লারের বাচ্চা আর ফিডের দাম বাড়তি থাকায় দামও বেড়েছে।’
মুরগি ও ডিমের বাজার একটা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী। তবে কারা সেই সিন্ডিকেট সেটা ‘না’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের কথা সবারই জানা। যাদের বলার কথা, তারা কেউ কিছু বলছে না। আমরা যেমন কিনি, তেমন বেচি।’ তবে রমজানের আগে বাজার আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাবুল মিয়া।
টিসিবির সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। যা এক মাস আগেও ছিল ২১০ থেকে ২৩০ টাকা। সেই হিসেবে এক বছর আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। সব মিলিয়ে এক বছরে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১২০ টাকারও বেশি।’
জানা গেছে, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিতে উল্লেখ করেছে, মুরগির খাবারসহ অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধির পরও এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন ব্যয় করপোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। অন্যদিকে, প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তাতে বর্তমানে উৎপাদন খরচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হতে পারে।