নিজস্ব প্রতিবেদক
জনগণের ভালোবাসা অর্জনের জন্য পুলিশকে দমন-পীড়ন থেকে বেরিয়ে এসে আইনি সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক(আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
তিনি বলেন, জনগণের পুলিশ হতে হলে জনগণকে ভালবাসতে হবে। তাদের জন্য কাজ করতে হবে, তাদের কাছে যেতে হবে। দমন-পীড়ন থেকে বেরিয়ে এসে আইনি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে। পুলিশকে সকল ধরনের দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবে না, মাদকমুক্ত পুলিশ তথা দেশ গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশ পুলিশকে জনবান্ধব, আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্যে ইনোভেশন অ্যান্ড বেস্ট প্র্যাকটিস শাখা আয়োজিত পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত সকল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের মতামত গ্রহণ বিষয়ক পাঁচ দিনের কর্মশালার শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আইজিপি।
তিনি বলেন, সবার মতামত নিয়ে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে পুলিশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে চাই যাতে জনগণ পুলিশকে প্রকৃত অর্থেই ভালবাসে, সম্মান করে, শ্রদ্ধা জানায়। যাতে জনগণের হৃদয়ে দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ী আসন করে নিতে পারে বাংলাদেশ পুলিশ।
বর্তমান করোনাকালে পুলিশের ভূমিকা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম দিন থেকেই কোনো ধরনের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য অপেক্ষা না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক পুলিশ সদস্য নিজের অজান্তেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত জীবন দিয়েছেন পুলিশের ৪৪ জন সম্মুখযোদ্ধা।
বর্তমানে পুলিশ সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী রয়েছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, আমরা করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মাত্র দুই সপ্তাহে ২৫০ থেকে ৫০০ বেডের কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় ঢাকায় আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সম্পন্ন একটি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য মাত্র ১২ দিনে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালেও কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের ন্যায় একই প্রটোকলে করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। এর ফলে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন, তাদের মৃত্যুর হার কমছে।
চলমান করোনায় জনগণের সেবায় পুলিশের অনন্য অবদানের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, বর্তমান করোনাকালে পুলিশ যেভাবে জনগণের কাছে গিয়েছে, তাদের পাশে থেকেছে, তাদেরকে সুরক্ষা দিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের প্রশংসা করছে। পুলিশ প্রধান হিসেবে এ জন্য আমি অত্যন্ত গর্বিত।
আইজিপি বলেন, করোনায় পুলিশ শুধু কোয়ারেন্টাইন, লকডাউনই বাস্তবায়ন করেনি। অসহায় মানুষের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে যখন স্বজনরা কেউ এগিয়ে আসেনি, তখন পুলিশ তাদের জানাজার আয়োজন, দাফন এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেছে। এসব দায়িত্ব পুলিশের নয়, পুলিশকে এ দায়িত্ব দেয়াও হয়নি। কিন্তু পুলিশ কেন এটা করেছে? পুলিশ কাজটি নিজেদের মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে করেছে। এজন্য মাত্র তিন মাসে পুলিশ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বাংলাদেশ পুলিশের এ ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।
আইজিপি বলেন, ৫০ বছর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধ দেশ সেবায় পুলিশের জন্য একটা সুযোগ তৈরি করেছিল। ৫০ বছর পর করোনা আবার জনগণের কাছে যাওয়ার একটা সুযোগ নিয়ে এসেছে।
আইজিপি প্রশ্ন রেখে বলেন, এক সময় করোনা চলে যাবে, তখন কী হবে? আমরা কি আগের অবস্থায় ফিরে যাবো? তিনি বলেন, না, আমরা যেখানে গিয়েছি সেখান থেকে আর ফিরে আসবো না। সেখান থেকে আরও এগিয়ে যাব।
তিনি বলেন, মানুষের ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা কেনা যায় না, অর্জন করতে হয়।
আইজিপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুলিশ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে সাধারণ থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকহানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের অন্যতম সারথী হিসেবে দেশের জন্য রক্ত দিয়ে গড়া এ বাহিনীকে উন্নত দেশের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিটকে পাঁচটি ক্লাস্টারে ভাগ করে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত সকল পদমর্যাদার প্রায় পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য উত্তম চর্চা, ক্যারিয়ার, দুর্নীতি, ওয়েলফেয়ারসহ অন্যান্য বিষয়ে লিখিত মতামত দিয়েছেন।