দুর্নীতির প্রতিবাদে পানিতে ঈদের নামাজ

বাঁধ নির্মাণে সাহায্য ও তদারকি করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন


নিজস্ব প্রতিবেদক,খুলনাঃ ২০০৭ এর প্রলয়ংকারী সিডর আর ২০০৯ এর সর্বনাশী আইলার পর এবার সুপার সাইক্লোন আম্পানে লণ্ডভণ্ড খুলনার কয়রা উপজেলা। গত দশকের প্রাকৃতিক ধ্বংসাত্মক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই সুপার সাইক্লোন আম্পান নোনা জলে তলিয়ে দিলো সমগ্র উপজেলাটি।

আম্পানের তাণ্ডবে কয়রায় ১২১কি.মি বেড়িবাঁধের মধ্যে ২১ জায়গায় ৪০ কি.মি অধিক বাঁধ ভেঙে গেছে৷

এরমধ্যেই আজ ঈদুল ফিতরের দিন সেই ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ নির্মাণে অংশ নিলেন উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। আইলার আঘাতের সেই দিবসেই এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে। ২ নম্বর কয়রা এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের পাশের পানির মধ্যে দাঁড়িয়েই কয়রাবাসী ঈদের নামাজ আদায় করেন।পানিতে দাড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় শেষে তারা অংশ নিলেন বাঁধ নির্মানে। ঈদের নামাজে ইমামতি করেন প্রাক্তন কয়রা প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান তমেজ মাওলানা।

গত ২০ মে আম্পানের তাণ্ডবলীলায় নদী ও সমুদ্রের নোনা জলে বিলীন হয়ে গেছে এ অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। বাঁধ ভেঙে অস্বাস্থ্যকর দূষিত নোনা পানির তলে অবস্থান করছে উপজেলাটির ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৬২ টি গ্রাম।

আম্পানের ফলে উপজেলার ১ লাখ ৮৪ হাজারেরও অধিক মানুষ হয়েছে গৃহহীন। নোনা পানিতে ডুবে গেছে সাড়ে ৪ হেক্টর চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের। নষ্ট হওয়া ১০-১১ মেট্রিক টন চিংড়ি ও সাদা মাছের বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। নেই খাওয়া ও থাকার জায়গা, নোনা পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে সুন্দরবন কোল ঘেঁষা উপজেলার মানুষেরা।

কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: হুমায়ুন কবির বলেন, নোনা জলে মানুষ চরম ভোগান্তিতে বসবাস করছে। আজ ঈদের ভাঙ্গা বাঁধের পাশে অনুষ্ঠিত হবার পর সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

পানিতে ঈদের নামাজের বিষয়ে তিনি বলেন, ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ বাঁধে গিয়েছিল। ঈদের নামাজের জন্য বাঁধ ছেড়ে আসার সুযোগ নেই। তাই সেখানেই নামাজ হয়। দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। একটিতে তিনি নিজে ইমামতি করেন বলে জানান।

কয়রা উপজেলার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, এবছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফলতি ও নিজস্ব ঠিকাদার দিয়ে নির্মিত বাঁধসমূহ আম্পানে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তিনি টেকসই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য পাউবো এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে আহবান করেন।

কয়রা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার বিশ্বাস বলেন, আমরা বেড়িবাধঁ নির্মাণ প্রক্রিয়া দ্রুত চালু করতে ওপর মহলকে জানিয়েছি। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনও ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে পাঠিয়েছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে জানা গেছে, অতীতে কয়রা উপজেলায় বাঁধ নির্মাণ সহ সরকারি সাহায্য সহযোগিতা বিতরণে অনিয়ম রয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বাঁধ নির্মাণে সাহায্য ও সামগ্রিক বিষয়াশয় তদারকি করতে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী।