হাবিবুল্লাহ মিজান
টাঙ্গাইলের কালিহাতির ইউএনও শামীম আরা নিপার নতুন উদ্ভাবন
এখন আর কোন ডাক্তাররা করোনা রোগী দেখে ভয়ে পালাবেন না। টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নিপা উদ্ভাবন করেছেন করোনা ইউনিটের ডাক্তারদের নিরাপদ রাখতে ভ্রাম্যমাণ একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্র।
এই কাজে পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরই স্বামী মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: মো: শাহ আলম,বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ তালুত। টাঙ্গাইলের মো: আল-আমিন নামের এক উদ্যমী তরুণ ও তার টিম কারিগরি সাহায্য করেছে।
ইউএনও শামীম আরা নিপা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে দেশজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছেন।
কালিহাতি উপজেলায় কর্মরত অবস্থায় রোগীদের কাছে থেকে অভিযোগ পেলেন যে, হাসাপাতালের করোনা ইউনিটগুলোতে ডাক্তাররা নিয়মিত রাউন্ডে আসেন না। আসলেও খুব কম সময়ের জন্য দূর থেকে কথা বলেই চলে যায়।
ইউএনও শামীম আরা নিপা এটাও জানতেন যে, ডাক্তারদের জন্য লম্বা সময় পিপিই পরে থাকাও কষ্ট সাধ্য।
কিন্তু রোগীদের এসময় ডাক্তারদের সাহচর্য খুব দরকার। তাঁদের উপস্থিতি রোগীর মনে সাহস যোগায়। সাহসের উপর ভর দিয়েও অনেক রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে পারেন। একটি ব্যয়বহুল পিপিই একদিনের বেশি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাছাড়া পিপিই এবং মাস্কের মান নিয়ে অনেক ডাক্তার প্রশ্ন করেন। প্রকোপ কমে গেলেও করোনা খুব দ্রুত নির্মূল হবার লক্ষণ নেই। পরেও আসতে পারে আরও নতুন ছোঁয়াচে মহামারী।
এই সব বিবেচনায় তাঁর ব্যাচমেট ও বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ তালুতের সাহায্য চাইলেন।
তাকে জানালেন করোনা ইউনিটে ঘনঘন ডাক্তার যেন প্রবেশ করে রোগীদের খবরাখবর নিতে পারেন সেজন্য স্যাম্পল কালেকশন কিওস্কের এর আদলে একটি ছোট মোবাইল কার্ট বা গাড়ির ডিজাইন স্কেচ জুরুরি দরকার।
তার কাছে থেকে ডিজাইন স্কেচ পেয়ে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই ইউএনও শামীম আরা নিপা চমৎকার একটা গাড়ি তৈরি করিয়ে ফেলল। তাকে সাহায্য করলেন টাঙ্গাইলের মো: আল-আমিন নামের এক উদ্যমী তরুণ ও তার টিম।
ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ তালুত বলেন, টাঙ্গাইলের ওয়ার্কশপে এই গাড়িটি এত চমৎকারভাবে তৈরি করা এক বিস্ময়কর ব্যাপারই বটে।
জানা গেছে ব্যাটারিচালিত এই গাড়িটির দরজা এয়ারটাইট এবং ব্রেকের ব্যবস্থা আছে। কেবিনও এয়ারটাইট। মেঝে থেকে ছাদ সর্বত্র ছিদ্র বন্ধ করা হয়েছে। ভিতরে আরও আছে বরফ কুল্ড এয়ার কুলার আর একটা ছোট অক্সিজেন ক্যানিস্টার। যদিও আধা ঘণ্টায় কোন সাফোকেশনের লক্ষণ মেলেনি। যন্ত্রটি
এখন ব্যবহার করা হচ্ছে টাঙ্গাইলের একটি উপজেলার হাসপাতালে। ডাক্তাররা রীতিমত অবাক। আগে কালিহাতি সদর হাসপাতালের
করোনা ইউনিটে পারতঃপক্ষে কেউ যেতেই চাইতেন না। এখন সব ডাক্তারই যাচ্ছেন। গ্লাভসে হাত বের করে কাজও করা যাচ্ছে। আকারে সরু হওয়ায় সব জায়গায় চলাচল করতে পারছে অনায়াসে। খরচ পড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।
ইঞ্জিনিয়ার তালুত বলেন, সম্পূর্ণ দেশে তৈরি, এই গাড়ি সব জেলা শহরের ওয়ার্কশপগুলোতেই দ্রুত নির্মাণ সম্ভব।
জানা গেছে মুগদা হাসপাতালে এই যন্ত্রের ডেমো হবে ঈদের পর। যেকোন আকারের সবরকমের মানুষই অনায়াসে এঁটে যাচ্ছেন।
ইঞ্জিনিয়ার তালুত বলেন, আগামীতে আরও উন্নত, আরও নিরাপদ, আরও ইউজার ফ্রেন্ডলি করা হবে ডিজাইনটি।
এই অনন্য সাধারণ উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের জন্য নিপাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন অনেকেই।