বিশেষ প্রতিবেদক
মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশের বিরুদ্বে এবার ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তণ এক নারী সহকর্মী।
আদালত সূত্রে জানা গেছে গত ৩১ শে অক্টোবর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে পিটিশন মামলা দায়ের করেছে মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক একজন আয়া।
শুনানীর পরে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ শাহাদাত হোসেন পিটিশন মামলার আবেদনটি গ্রহণ করে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই সময় ভিক্টিম বিচারকের সামনে ঘটনা বর্ননা করতে যেয়ে অঝরে কাঁদতে থাকে।
ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার ধলাইচর গ্রামের মধ্যবয়সী এই নারী আদালতে অভিযোগ করেছেন
অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ তাঁকে একাধিকবার জোর করে ধর্ষণ করেছেন এবং ধর্ষণের গোপন ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকিও দিয়েছেন।
মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের বালক শাখার দ্বিতীয় তলায় মোস্তফা কামাল খোশনবীশের বাসভবনে এভাবে জোর করে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন বলে আদালতে করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাজধানীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল সময়ের সুযোগ নিয়ে জুলাই মাসের ১৭ তারিখেও কলেজের সুন্দরী এই আয়াকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভিক্টিম।
২০১২ মৌখিকভাবে মাস্টার রোলে মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজে আয়া হিসাবে যোগদান করেন ধর্ষণের শিকার এই অসহায় নারী। সুনামের সহিত কাজ করায় ২০১৭ সালের ২৭ শে সেপ্টেবর তাঁর চাকুরী স্থায়ীকরণ হয়।
মোস্তফা কামাল খোশনবীশ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথমে হেড মাস্টার হিসাবে যোগ দেন ২০১৯ সালে। ২০২১ সালে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদানের পরেই সুন্দরী এই আয়াকে কারণে অকারণে মোস্তফা কামাল খোশনবীশ তাঁর অফিসে ডেকে বিভিন্ন ইঙ্গিতপুর্ণ এবং অশ্লীল কথাবার্তা বলতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুযোগ পেলেই কলেজের কাজের ফাঁকে তার স্ত্রী অসুস্থ থাকার অজুহাতে আয়াকে মোস্তফা কামাল খোশনবীশ তাঁর ঘরের কাজ করাতেন।
যুবতী আয়াকে ১০ হাজার টাকা দামের শাড়ি কিনে দেয়ার লোভ দেখায়। ওই সময়ে বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে তাঁকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে বলে আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে। ধর্ষিতা আয়া তাঁকে ধর্ষনের কথা সবাইকে
বলে দিতে চাইলে মোস্তফা কামাল খোশনবীশ আয়াকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাঁর কথা না শুনলে পরিণতি ভয়াবহ হবে হুমকি দিয়ে বলে ‘তুই যদি বলা মাত্রই না আসোস,তাহলে আমার মোবাইলে ধারণকৃত তোর খারাপ ভিডিও সবাইকে দেখাই দিব।’
মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের লিটন নামে এক পিওন অধ্যক্ষ কর্তক আয়াকে ধর্ষণের বিষয়টি জেনে ফেলায় মোস্তফা কামাল খোশনবীশের নির্মম অত্যাচারে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। এই ঘটনায় সারা মিরপুর তোলপাড় শুরু হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে ধর্ষিতা আয়াকেই উল্টো ডেকে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক চাকুরীচ্যূত করেন। অধ্যক্ষের হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও তাঁর চাকুরি রক্ষা হয়নি।
আয়ার বেতন ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা জোরপূর্বক নিয়ে নেয়। অধ্যক্ষ্য আয়াকে আশ্বস্ত করে পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে কিছুদিন পর তাঁকে আবার চাকুরি দেয়ার মিথ্যা আশ্বাসও দেয়া হয়।
মিথ্যা কথা বলে আয়াকে ডেকে নিয়ে কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারীর সামনে তাঁর কথা রেকর্ড করে কতগুলো কাগজে স্বাক্ষর নেয় অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ ।
পরবর্তীতে ভিক্টিমকে ফোন দিয়ে বলে মোস্তফা কামাল খোশনবীশ তাঁর নতুন বাসায় তাঁর মেয়েকে স্কুলে নিয়ে আসার কাজ এবং অসুস্থ স্ত্রীকে দেখাশোনা করলে আয়াকে তাঁর আগেড় চাকুরীতে পুনরায় নিয়োগ দিবে। আর তাঁর কথা না শুনলে ধর্ষণের ভিডিও সবার কাছে ছড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়।
এমতাবস্থায় জুলাই মাসের ১৭ তারিখে দুপুর তিনটায় মোস্তফা কামাল খোশনবীশের স্ত্রী ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমানোর অবস্থায় আয়াকে আবারো জোরপূর্বক ধর্ষণ করে বলে আয়া গত ৩১ শে অক্টোবর অভিযোগ করেছে আদালতে।
আয়াকে ধর্ষনের অভিযোগকে মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্র মূলক দাবী করেছেন অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ।
আমার কিছু সহকর্মী শিক্ষক আমাকে জোর করে পদত্যাগে না করাতে পেরে আমার বিরুদ্বে সাবেক আয়াকে দিয়ে এই ডাহা মিথ্যা মামলা করিয়েছেন।
সুষ্ঠ তদন্ত হলে আমি নির্দোষ প্রমানিত হবো বলেও দাবি করেছেন অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ।