মীরপুর বাংলা স্কুল এণ্ড কলেজের শিক্ষক মাওলানা বাছির উদ্দিনের বিরুদ্বে প্রতারণার অভিযোগ

সুন্দরী ছাত্রীকে ফুসলিয়ে বিয়েও করেন

মীরপুর বাংলা স্কুল এণ্ড কলেজের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক মাওলানা বাছির উদ্দিনের বিরুদ্বে তাঁর নিজের সহকর্মীদের কাছ থেকেই ফ্ল্যাট কিনেদেয়ার কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগএসেছে

বিশেষ প্রতিবেদক
মীরপুর বাংলা স্কুল এণ্ড কলেজের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক মাওলানা বাছির উদ্দিনের বিরুদ্বে তাঁর নিজের সহকর্মীদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কিনে দেয়ার কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ এসেছে।
অল ক্রাইমস ডট টিভির কাছে এই সংক্রান্ত দুটো অডিও হাতে এসেছে।
অডিওতে মাওলানা বাছিরের মাধ্যমে ফ্ল্যাট কিনতে যেয়ে তাঁদের জমানো শেষ সম্বল খোয়ানোর তথ্য উঠে এসেছে। যদিও এই প্রতিবেদকের সাথে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে অভিযুক্ত মাওলানা বাছির সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।

একটি অডিওতে মীরপুর বাংলা স্কুল এণ্ড কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক মরহুম মোঃ নিয়ামুল হকের  পরিবারের একজন সদস্য বলেন, তাঁর নিষেধ স্বত্তেও মাওলানা বাছিরকে কোন লিখিত প্রমান ছাড়াই ৭ লক্ষ টাকা দেন নিয়ামুল।

মেধাবী শিক্ষক মরহুম নিয়ামুলের সাথে তাঁর এতিম দুই শিশুপুত্র মোহাইমেনুল হক এবং মাশরুর হক

কিন্তু নিয়ামুল যখন জানতে পারেন তাঁর নামে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন না করে গোপনে অন্যদের নামে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে এবং সে ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হয়েছেন,তখন বাসায় এসে শিশুর মতো কাঁদতে থাকেন।
মাওলানা বাছিরের আরেক সহকর্মী মাওলানা জিয়াউল হক এবং নিয়ামুলের বড়বোন জামাই তাঁদের ফ্লাটের দলিল তৈরি করলেও তাঁরা মাওলানা বাছিরের পরামর্শে নিয়ামুলকে ডাকেন নি। দুই দিন পর মাওলানা জিয়াউল শিক্ষক নিয়ামুলকে বিষয়টা জানালে সে অসুস্থতা বোধ করে এবং বাসায় এসে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে থাকে। অসহায় শিশুর মত চোখের জল মুছতে থাকে। এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর এক ঘনিষ্ঠ স্বজন।
পরবর্তিতে মাওলান বাছিরের কাছে থেকে টাকা ফেরত পেতে মীরপুর বাংলা স্কুল এণ্ড কলেজের একাধিক শিক্ষকের কাছেও দেনদরবার করেন মরহুম নিয়ামুল।
কিন্তু টাকা না দিয়ে পুরোপুরি অস্বীকার করেন টাকার কথা এবং বিভিন্নভাবে হুমকি দেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের ‘বিতর্কিত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খোশনবীশের সাথে তাঁরই ঘনিষ্ট ও প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত ইসলামী শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক মাওলানা বাছির উদ্দিন

অভিযুক্ত মাওলানা বাছির এবং প্রতারিত নিয়ামুল উভয়ই নরসিংদী জেলার বাসিন্দা এবং দূর সম্পর্কের আত্মীয়তার সুবাধে প্রথমে পারিবারিক ভাবেই মাওলানা বাছিরের কাছে থেকে পাওনা ৭ লক্ষ টাকা ফেরত পাওয়ার চেস্টা করেন, এমনটাই জানিয়েছেন মরহুম নিয়ামুলের স্বজন এবং তাঁর একাধিক সহকর্মীগন।
করোনাকালিন ২০২০ সালে শিক্ষক নিয়ামুল জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসা করাতে তাঁর প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়।ব্যায়বহূল কিডনি চিকিৎসার খরচ মেটাতে অসহায়ের মতো মাওলানা বাছিরের নিকট পাওনা টাকা ফেরত পেতে অনেক কাকুতি মিনতি করেন। কিন্তু তাতেও মাওলানা বাছিরের মন গলে নাই। ভারতে চিকিৎসা করাতে যাবার আগেও মাওলানা বাছিরের কাছে নিয়ামুল অন্তত অল্প কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন।
এক বছর পরে তিনি আবারও মারাত্বক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভর্তি হন জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে। ডাক্তারগন দ্রুত অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন।মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশের উপস্থিতিতে অসুস্থ শিক্ষক নিয়ামুলকে দেখতে যাওয়া সহকর্মীদের কাছেও মাওলানা বাছিরের দ্বারা ৭ লক্ষ্য টাকা প্রতারণার কথা বলেন। তখন তাঁর চোখে কান্নার জল।মুমুর্ষ নিয়ামুল তাঁর সহকর্মীদের কাছে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন ‘হারামজাদা বাছির আমার জীবন টা তছনছ করে দিয়েছে।’
এক সময়ের ঘনিষ্ঠ এবং আত্মীয় হলেও পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী মাওলানা বাছির প্রতারিত শিক্ষক নিয়ামুলের অসুস্থতা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটি বারের জন্যও তাকে দেখতে যাননি বলে জানা গেছে।
কিন্তু শিক্ষক নিয়ামুলের মৃত্যুর পর তাঁর কবরস্থানে যেয়ে মায়াকান্নার ভিডিও তৈরি করেন শুধু লোক দেখানোর জন্য,অভিযোগ অনেক শিক্ষকদের।
মেধাবী শিক্ষক নিয়ামুল ২০০৬ সালের জুন মাসের ১০ তারিখে মীরপুর বাংলা স্কুল এণ্ড কলেজে যোগ দেন। উনি মারা যান ২০২১ সালের জুনের ১০ তারিখে। তাঁর অসহায় স্ত্রী তাঁদের এতিম দুই শিশুপুত্র মোহাইমেনুল হক এবং মাশরুর হককে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে প্রচন্ড অর্থভাবে।
আরেকটি অডিওতে জানা গেছে মাওলানা বাছির তাঁর আরেক সহকর্মী মীরপুর বাংলা স্কুল এণ্ড কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক জাকির, গনিত বিভাগের শিক্ষক সগির, হুমায়ূন কবির ও আনোয়ার হোসেন এবং প্রাইমারী স্কুল শাখার শিক্ষক ইউসুফসহ বিভিন্ন জনের কাছে থেকে প্রায় ৫৯ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন।
প্রতারিত শিক্ষক জাকির হোসেন জানান এই প্রতারনায় মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মাওলানা জামালও জড়িত ছিলেন বলে শোনা যায়।
মীরপুর বাংলা স্কুল এণ্ড কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানিয়েছে যে, মাওলানা বাছির উদ্দিন নিজ প্রতিষ্ঠানের এক সুন্দরী ছাত্রীকে প্রথমে প্রাইভেট পড়াতেন। এক পর্যায়ে ফুসলিয়ে বিয়েও করেন ধনাড্য পিতার অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক এই কন্যাকে। এক পুত্র সন্তান রেখেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে এই নারী তাঁর স্বামী মাওলানা বাসিরের বাটাপার চরিত্র বুঝতে পেরে তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। বর্তমানে তিনি তাঁর স্বামীসহ লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসাবস করছেন বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত মাওলানা বাছির সব অভিযোগই অস্বীকার করে বলেন,আপনার কাছে ভুল তথ্য গেছে। আমি কারো কাছে থেকে ফ্ল্যাট কিনে দেয়ার কথা বলে একটি পয়সাও নেয়নি।

কিন্তু নিজের ছাত্রীকে ফুঁসলিয়ে বিয়ে করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর এড়িয়ে যান এবং ফোন কেটে দেন।