কেরানীগঞ্জের আটিবাজারের রাফিয়া ক্লিনিকের মালিক মো. ওহেদুজ্জামান প্রায় ১৫ বছর ধরে প্রতারণা করেছেন। চিকিৎসক না হয়েও তিনি ‘মেডিসিন বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। রোগী প্রতি ৪০০ টাকা করে ভিজিটও নিতেন।
যে সনদ দিয়ে তিনি চিকিৎসা পেশার রেজিস্ট্রেশন নিয়েছিলেন, সেটি ছিল ভুয়া। বুধবার (৭ জুলাই) তার সনদ নকল বলে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমঅ্যান্ডডিসি)। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করেছে সংস্থাটি।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কেরানীগঞ্জের বাস্তা ইউনিয়নের বাঘাসুর গ্রামের কৃষক সাদেক আলীর ছেলে ওহেদুজ্জামান এইচএসসি পাস করার পর ঢাকায় চলে যান। কয়েক বছর পর গ্রামে ফিরে তিনি নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দেন। বিএমঅ্যান্ডডিসিতে রেজিস্ট্রেশনের জন্য তিনি ২০০৬ সালে আবেদন করেন।
‘দ্য সেইন্ট পিটারসবার্গ স্টেট মেডিকেল একাডেমির’ সনদ জমা দিয়ে তিনি একই বছরের ১৬ মে বিএমঅ্যান্ডডিসির রেজিস্ট্রেশন (এ-৪২৫৭২) নেন ওহেদুজ্জামান। এরপর কেরানীগঞ্জের আটিবাজারে ভবন ভাড়া নিয়ে রাফিয়া ক্লিনিক খুলে বসেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি সেখানে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন এবং রোগীপ্রতি ৪০০ টাকা করে ভিজিট নেন। ১৫ বছর ধরে প্রতিদিন শত শত রোগী দেখে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেছেন। মাত্র চার বছরের মধ্যে ভাড়া ভবন ছেড়ে কোটি টাকায় জমি কিনে বহুতল ভবন নির্মাণ করে নিজস্ব ভবনে রাফিয়া ক্লিনিক স্থানান্তর করেন।
গত ৩০ জুন বিএমঅ্যান্ডডিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তার প্রতারণার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বিএমঅ্যান্ডডিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. মো. আরমান হোসেনের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মোহাম্মদ ওহেদুজ্জামান রাশিয়ার ‘দ্য সেইন্ট পিটারসবার্গ স্টেট মেডিকেল একাডেমি’ থেকে ডাক্তারি পাসের সনদ দিয়ে বিএমঅ্যান্ডডিসির রেজিস্ট্রেশন নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি আসলে ভুয়া।
এ বিষয়ে, কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত দেবনাথ বলেন, চিকিৎসার মতো একটি মহান পেশার নামে ওহেদুজ্জামান লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। শুধু তাই নয় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল বিত্ত, বৈভব। ইতোমধ্যে বিএমঅ্যান্ডডিসি তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমরাও তার বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এলাকাবাসী প্রতারণার বিষয়টি জানার পর থেকে ওহেদুজ্জামান গা ঢাকা দিয়েছেন। বুধবার রাফিয়া ক্লিনিকে গিয়ে ওহেদুজ্জামানকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। রাফিয়া ক্লিনিকের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক শামীম ভূইয়া বলেন, আমি চার মাস ধরে হাসপাতালে যোগদান করেছি। স্যারের সার্টিফিকেট বাতিল করার কথা শুনেছি। এ ঘটনার পর থেকে স্যার রোগী দেখছেন না। তবে যথাযথ ডকুমেন্টস পেশ করে বিএমঅ্যান্ডডিসির রেজিস্ট্রেশন ফিরে পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।