নিজস্ব প্রতিবেদক
সাত মাসের বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্বে সম্মুখসারীর যুদ্বে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে দেশে অন্যতম জনপ্রিয় তরুন ইউএনও আশরাফুল আলম নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন।
সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশিদের দেয়া তথ্য মতে করোনা উপসর্গ ঠাণ্ডা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর নমুনা পরীক্ষা করান দুর্নীতির বিরুদ্বে জিহাদ ঘোষণাকারী সাটুরিয়া ইউএনও আশরাফুল আলম। ২০ শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আসা ফলাফলে তাঁর করোনা পজিটিভ আসে। এরপর থেকে তিনি তাঁর সরকারি বাসভবনে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
গত অক্টোবর ৫ তারিখে ইউএনও আশরাফুল আলমের করোনা পরীক্ষার ফলাফল নিগেটিভ আসে।
প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতা নিয়েও সাটুরিয়াবাসীর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আন্তরিকতার কারনে আবার দায়িত্বে ফিরেছেন তিনি। শুধু শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে বসেই দায়িত্ব পালন করছেন না। সাটুরিয়াবাসীর বিভিন্ন সমস্যা তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য অসুস্থ শরীর নিয়েও ছুটে বেড়াচ্ছেন গ্রামের মেঠো পথ।
মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার সাটুরিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বাছট, বৈলতলা ও মুকদমপাড়া গ্রামের ১২৮ হেক্টর আবাদি জমি জলাবদ্ধতার কারনে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। এই তিনটি গ্রামের ১১ হেক্টর লেবু বাগানের ফলজ গাছগুলো মারা যাচ্ছে। আনুমানিক ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে।
এই সব জমিগুলো তিন ফসলি জমি। অথচ জলাবদ্ধতার কারনে রোপা আমন ধান চাষ করতে পারছেন না স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকগন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে এলাকাবাসী একাধিকবার গিয়েছেন জলাবদ্ধতা নিরসনে জুরুরী ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু তাতে কোন সমাধান হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন।
সেই জলাবদ্ধতার সমস্যা সরেজমিনে আজ মঙ্গলবার দেখতে গিয়েছিলেন ইউএনও আশরাফুল আলম। প্রায় ঘন্টাব্যাপি এই সরেজমিন পরিদর্শন কালে তিনি কথা বলেছেন স্থানীয় প্রান্তিক কৃষক,নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সাথে।
প্রচণ্ড রোদ এবং কাদার মধ্যেও নিজে ঘুরে দেখেছেন ক্ষতিগ্রস্ত আবাদি জমি, গাজী খালি নদীর তীর এবং লেবু বাগানগুলো।
সরকারী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) তহবিল থেকে জলাবদ্ধতা স্থায়ী সমাধানে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
ইউএনও আশরাফুল আলমের এই হঠাৎ পরিদর্শনে ব্যাপক খুশির বন্যা বয়ে গিয়েছে এলাকায়।
সাটুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পিন্টু বলেন, ইউএনও মহোদয় যেহেতু নিজে জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখে গেছেন আজ,তাই আশা করি খুবই দ্রুত একটা স্থায়ী সমাধান হবে।
সাটুরিয়া ইউনিয়নে ৯ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বাছট বৈলতলা মোকদমপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার শান্তিভবন সংলগ্ন গাজী খালির নদীর উপর দ্রুত ব্রিজ নির্মাণে সহয়তার আশ্বাসও দিয়েছেন ইউএনও মহোদয়।
বাছট বৈলতলা পল্লী মঙ্গল সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস বলেন, আমাদের গ্রামের সব সমস্যা আমরা উনার কাছে খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছি। উনি মনযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং পর্যায়ক্রমে সমাধানে আশ্বাস দিয়েছেন।
বাছট বৈলতলা মোকদমপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার সহ-সভাপতি নুরুল হক মুন্সী বলেন, আমার প্রায় আশি বছরের জীবনে দেখিনি আমাদের বাছট গ্রামের কোন সমস্যা নিজের চোখে দেখতে এতো বড় অফিসার নিজে এসেছেন।
একাধিক বয়স্ক গ্রামবাসীর মতে বাছট গ্রামে এই প্রথম কোন ইউএনও স্থানীয় সমস্যা সমাধানে নিজেই আসলেন।
তাঁদের মতে গ্রামটি ঢাকা ও মানিকগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী হওয়া উন্নয়নের দিক দিয়ে খুবই অবহেলিত। ইউএনও আশরাফুল আলমের আকস্মিক পরিদর্শে সবার মাঝে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
জলাবদ্ধতা,ব্রিজ নির্মাণ এবং গ্রামে প্রধান সড়ক পাকা করার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ন- সাধারন শামসুর রহমান পিন্টু
অসুস্থ শরীর নিয়েই জনগণের পাশে ইউএনও আশরাফুল আলম
জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস