গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক;

গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) এ লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযোগ উঠেছে আশরাফুল আলম বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ কাজের মাধ্যমে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে আশরাফুল আলম ও তার স্ত্রী সাবিনা আলমের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছে। নোটিশে দুদক বলেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আশরাফুল আলম ও সাবিনা আলমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার তথ্য মেলায় এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে কমিশনের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে, তারা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাই নোটিশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের নিজেদের, নির্ভরশীল ব্যক্তিদের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, দায়দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ নির্ধারিত ফরমে দাখিল করতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরনী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা মিথ্যা বিবরনী দাখিল করলে ২০০৪ (২০০৪ সনের ৫ নং আইন) আইনের ধারা ২৬ এর উপ-ধারা (২) মোতাবেক আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এরপরও থেমে নেই গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের অবৈধ কাজ ও দুর্নীতি। নানা লবিং-তদবির করে দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া শতশত কোটি টাকা দিয়ে প্রধান প্রকৌশলীও হয়েছেন তিনি।

গত ২৬ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বরাবর করা এক লিখিত আবেদনে এসব অভিযোগ করেন মো. আলহাজ্ব মো. খলিলুর ইসলাম নামের একজন ঠিকাদার।

লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, আশরাফুল আলম প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার পর বিভিন্ন উর্ধ্বতন মহলকে ম্যানেজ করে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে তার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে করা তদন্ত ব্যহত হবে বলে আমি আশঙ্কা করছি।কাজে তাকে প্রধান প্রকৌশলী পদে বহাল রেখে তদন্ত করলে সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ারও আশঙ্কা করছি। এই আশরাফুল আলম যুবলীগের কথিত নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) সিন্ডিকেটের সদস্য। জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল আলমের দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার পর তার দুর্নীতি ও অবৈধ কার্যকলাপ আরো বেড়েছে। তার নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ কাজের ফলে গণপূর্ত অধিদফতর কলঙ্কিত হচ্ছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। গত ৩১ ডিসেম্বর গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান আশরাফুল আলম। তার আগে তিনি ওই অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। গত বছর শুদ্ধি অভিযানে গ্রেফতার হন ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম)।

তার সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। এদের মধ্যে আশরাফুল আলমসহ সাবেক তিন প্রধান প্রকৌশলীর পাশাপাশি বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আছেন।

উল্লেখিত অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব সুভাষ চন্দ্র সরকারের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে একনেক। দুর্নীতি তদন্তে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গঠিত কমিটি সরেজমিন পরির্দশনকারী দলের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়। ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী বরাবর তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়।

এতে তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করেন। ২০০৩ সালের ১৬ আগষ্ট একনেকে চূড়ান্ত প্রকল্পটি ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির বরাবারে অনুমোদন দেয়া হয়।

লিখিত অভিযোগে আলহাজ্ব মো. খলিলুর ইসলাম আরও জানান , রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেলে ওয়াহিদুল ইকবালসহ নির্দিষ্ট বেশ কয়েকজন ঠিকাদার রয়েছেন। যাদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব ব্যবসা করেন আশরাফুল আলম। সার্কেলে থাকার সময় আশরাফুল সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীদের কাছ থেকে প্রতিমাসে আপ্যায়ন বাবদ ৮০ হাজার টাকা করে আদায় করতেন। এছাড়া প্রতিটি প্রকল্পে ১৫ শতাংশ কমিশন নিতেন তিনি। তত্ত্বাবধায়ক প্রকোশলী থেকে পদোন্নতি পাওয়ার কিছুদিন আগে দরপত্র আহবানের মাধ্যমে বিভিন্ন ঠিকাদারকে প্রায় ১শ কোটি টাকার কাজ দিয়ে কমিশন তুলে নেন তিনি। ফান্ডে অর্থ না থাকায় সেই ঠিকাদাররা এখন পড়েছেন চরম বিপাকে।

জানা গেছে, আশরাফুল আলম প্রেষণে গণপূর্ত নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে কিছুদিনের জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে চাকরি করেছেন। যাতে তার আগের সবকিছু ধামাচাপা পড়ে। পরবর্তীতে পদোন্নতি নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে গণপূর্তে যোগ দেন।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের মোবাইলে একাধিক ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।