এতো অভিযোগ তবুও বহাল তবিয়তে সরকারী চাকরিজীবী জহিরুল


নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঘুষ, দুর্নীতি, ধর্ষণ এবং জালজালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত বরিশাল জেলার পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের অফিস তত্ত্বাবধায়ক (বরিশাল জেলার পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের প্রাক্তন সাটঁ-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর) মো. জহিরুল ইসলাম। তার বাড়ি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার মাতিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত খুরশিদ আলী। ঘুষ, দুর্নীতি, ধর্ষণ এবং জালজালিয়াতিসহ জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

মামলাগুলো হলো- ১। চাকুরি দেয়ার নামে তিন লাখ টাকা ঘুষ গ্রহন করায় বরিশাল মোকাম বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী) আদালতে জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন মোসাম্মত ফাতিমা। যার মামলা নং ৩৫/১২।

২। ধর্ষনের অভিযোগে বরিশাল মোকাম বিজ্ঞ মোকাম বরিশালের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের জজ বাহাদুর আদালতে জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন মোসা: খাদিজা বেগম। যার এম, পি মোং নং ৩৯/২০১২। উক্ত মামলায় তিনি ১৫ দিন কারা বরণ করেন এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর হতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

৩। চাকুরি দেয়ার নামে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহন করায় বরিশাল মোকাম বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন আ: রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে মো. জহিরুল ইসলাম। যার মামলা নং ৬৭/২০১২।

৪। চাকুরি দেয়ার নামে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহন করায় বরিশাল মোকাম বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী) আদালতে জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন মো: জাহিদুল ইসলাম। যার মামলা নং সিআর ৭৪/১২ (সদর)।

এরপরও বরিশাল জেলার পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের প্রাক্তন মো: জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একের পর এক ঘুষ, দুর্নীতি, ধর্ষণ এবং জালজালিয়াতির নানা অভিযোগ আসতে থাকে। অতঃপর তার এসব অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে আ: রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে মো: জহিরুল ইসলাম বিগত ২০১২ সালের ২৮ জুন সচিব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করেন। তৎপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয় থেকে মন্ত্রনালয় পরিবার কল্যাণ-১ অধিশাখা হতে বিগত ২০১২ সালের ৭ মার্চ ৪৫.১৬৯.০২৭.০০.০০.০১৩.২০১১-৮০ এর স্মারক দ্বারা মো: জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অনুরোধ জানানো হয়। এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গৃহিত না হওয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয় থেকে মন্ত্রনালয় পরিবার কল্যা -১ অধীশাখা হতে বিগত ২০১২ সালের ১৭ জুলাই ৪৫.১৬৯.০২৭.০০.০০.০১৩.২০১১-২৪২ নং স্মারকে পুনরায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও অদৃশ্য কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।

সূত্রমতে, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করায় বিগত দিনে মো. জহিরুল ইসলামকে প্রশাসনিক কারণে বরিশাল জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় থেকে ঝালকাঠী জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছিল। অতঃপর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মো. জহিরুল ইসলাম ঝালকাঠি থেকে বিগত ২০১৮ সালের ১০ জুলাই অফিস তত্ত¡াবধায়ক হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে ভোলা জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে যান। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি ঝালকাঠী জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় হতে অজানা কারণে এলপিসি গ্রহণ করেন নাই এবং বেতন ভাতাদিও উত্তোলন করেন নাই। একজন সরকারি কর্মচারী দুই বছরের অধিকাল সময়ে বেতন ও ভাতাদি গ্রহণ না করে কিভাবে সংসার পরিচালনা করে আসছে তা জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে! জানা যায়, তিনি ভোলা জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় হতে বরিশাল জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় প্রায় ০১ বছরের অধিকাল সময়ে সংযুক্ত আদেশে কর্মরত আছেন। এ সময়ে তিনি বরিশাল জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ধীন ১০টি উপজেলা হতে কর্মচারীদের নিকট হতে বিভিন্ন কৌশলে ঘুষ, দুর্নীতি করে রাজারহালতে সংসার চালাচ্ছে।

বরিশাল মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের প্রাক্তন গাড়ি চালক মো. ফিরোজ সাংবাদিকদের কাছে বলেন, দুঃখজনক যে, এতো অভিযোগ থাকা সত্তে¡ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর হতে গত ১৬ জুলাই ৫৯.১১.০০০০.১৫২.১৯.০৭০.২০-১২৭৮ নং স্মারকে তাকে ভোলা হতে বরিশাল জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে অফিস তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে বদলি করা হয় এবং দক্ষ, অভিজ্ঞ অফিস তত্ত্বাবধায়ক মো: জাহাঙ্গীর হোসেনকে কোনো কারণ ছাড়াই ভোলা জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে বদলি করা হয়। এর ফলে বরিশাল জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে নানা ক্ষোভ বিরাজ করছে। আমি অবিলম্বে এই দুর্নীতিগ্রস্থ জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ বদলি আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে, জহিরুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেন নি।