গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মঈনুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক:

গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মো. মঈনুল ইসলামের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে অভিযোগ করেছেন  মামুনুর রশিদ নামে একজন ঠিকাদার।

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) দুদক কার্যালয়ে অভিযোগপত্র দায়ের করেন গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার মামুনুর রশিদ। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগপত্রে মামুনুর রশিদ বলেন, দুর্নীতি করে নামে-বেনামে গড়েছে অবৈধ সম্পদের পাহাড়। ইতোমধ্যে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চলতি বছরের শুরুর দিকে মঈনুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবও করা হয়েছিল। সম্পদ বিবরণীও চাওয়া হয়েছে তার কাছে। এরপরও থেমে নেই মঈনুল ইসলামের অবৈধ কাজ ও দুর্নীতি। দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া শতশত কোটি টাকা দিয়ে এখন প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য নানা লবিং-তদবির করে যাচ্ছে।

যেখানে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হয়েই দুর্নীতির রাজা বনে গিয়েছে সেখানে যদি সে প্রধান প্রকৌশলী হয় তাহলে মইনুল ইসলাম গণপূর্ত অধিদফতরকে কলঙ্কিত করবে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। তিনি বলেন, মঈনুল ইসলাম যুবলীগের কথিত নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) সিন্ডিকেটের সদস্য। জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদে ড. মঈনুল ইসলামের দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, নানা অনিয়ম ও কাজে ফাঁকি দেয়ায় গত বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) মঈনুল ইসলামকে ঢাকা থেকে খুলনায় বদলি করে দিয়েছে।

গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মেট্রোপলিটন জোন) ড. মঈনুল ইসলামের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ করা হয়। তা হলো-
১. চাকরি জীবনের শুরু থেকেই মঈনুল ইসলামের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আছে। ১৫তম ব্যাচের সহকারী প্রকৌশলীরা ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর যোগদান করলেও মঈনুল ৯ মাস পর ১৯৯৬ সালের ১২ আগস্ট চাকরিতে যোগ দেন।
২. ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাকরিতে অনুপস্থিত ছিলেন। ৯ বছর ৮ মাস ২২ দিন অনুপস্থিত থাকায় মঈনুলকে চাকরি থেকে চূড়ান্ত অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। পরে তৎকালীন মন্ত্রীকে ম্যানেজ করে চাকরিতে বহাল থাকেন।

৩. গত বছরের ৫ জুন র‌্যাব সদর দফতর নির্মাণকাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। উত্তরায় র‌্যাব সদর দফতর নির্মাণকাজের টেন্ডার নিষ্পত্তির চেয়ারম্যান ছিলেন মঈনুল। কথিত যুবলীগ নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সকে র‌্যাব সদর দফতরের নির্মাণকাজ পাইয়ে দেওয়ায় ভুমিকা রাখেন তিনি। বিধি অনুযায়ী প্রকল্পের দরপত্র গণপূর্তের ঢাকা সার্কেল-৩ থেকে আহ্বান ও তৎকালীন ঢাকা গণপূর্ত জোন থেকে মূল্যায়ন দেওয়ার কথা থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গণপূর্তের সদর দফতর থেকে ওই টেন্ডার আহŸান করে জি কে শামীমকে র‌্যাব সদর দফতরের কাজ পাইয়ে দেন মঈনুল। ৫৫০ কোটি টাকার কাজে সমান সমান অথবা কিছু কমে নেওয়ার কথা। কিন্তু ১০ শতাংশ বেশিতে জি কে শামীমকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। ১৫ শতাংশ কমিশনে এ কাজ করেন তিনি।

৪. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণে ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশিতে ঠিকাদারকে পাইয়ে দেন মঈনুল। ঠিকাদারের কাছ থেকে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কমিশন নেন তিনি।

৫. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আবাসিক ভবনের জন্য বালিশসহ ১৬৯ কোটি টাকার কেনাকাটায় দুর্নীতির ঘটনায় মজিদ সন্স কন্সট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আসিফ হোসেন ও সাজিন কন্সট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. শাহাদাৎ হোসেনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ঘটনায় ঠিকাদার আসিফ ও শাহাদাৎ এবং ১১ জন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মইনুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। মইনুল ইসলামের মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় এই অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।