‘সাটুরিয়ার মানিক’ থেকে এবার ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ বনে গেলো রাজ্জাক হোসাইন রাজ

সাটুরিয়া মানুষের জন্য নিজের জীবনের সবটুকু বিলিয়ে দিতে চাইছে

‘সাটুরিয়ার মানিক’ থেকে এবার ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ রাজ্জাক হোসাইন রাজ রাতের অন্ধকারে সাটুরিয়া ইউনিয়নের বাছট গ্রামের এক বিধবা নারীকে ত্রাণ সাহায্য দিচ্ছে

আবু বক্কর জসিম, সাটুরিয়া থেকে ফিরে

মহামারী করোনা ভাইরাসের ভয়ে সারা দেশের বেশীরভাগ রাজনীতিবিদরা ঘরের কোনায় নিজেদের লুকিয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার সাটুরিয়া ইউনিয়নে দেখা মিলেছে এক তরুন মানবতার ফেরিওয়ালাকে।

সাটুরিয়া ইউনিয়নের পানাইজুরি গ্রামের মরহুম আব্দুল সালামের বড় ছেলে আব্দুর রাজ্জাক। মুক্তিযোদ্বা কমান্ডার ওয়াহিদ মিলিটারির ভাতিজা। বিএনপি-জামাতের দুঃশাসনের অন্ধকার সময়ে যখন সাটুরিয়ায় ছাত্রলীগের কোন কান্ডারী ছিল না,তখন জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়ে ‘জয় বাংলাজয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে সাটুরিয়ার রাজপথ কাঁপিয়ে বেড়াতো সাটুরিয়া ইউনিয়নের শাখার ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক রাজ্জাক হোসাইন রাজ।

ইউনিয়নে ছাত্র রাজনীতির গন্ডী পেরিয়ে এক সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়া সাটুরিয়ার এই ছাত্রনেতা কেন্দীয় কমিটির সদস্য পদ লাভ করে তার দুর্দান্ত সাংগঠনিক গুণের কারনে। এরই মাঝে নামকরা একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে।

এভাবেই ‘সাটুরিয়ার মানিক’ থেকে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ বনে গেছে রাজ্জাক হোসাইন রাজ

এরপরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ‘সাটুরিয়ার মানিক’ উপাধি পাওয়া রাজ্জাক হোসাইন রাজকে।

কিন্তু সারা বিশ্বে নির্বিচারে পরিবেশ ধংস দেখে  প্রাণ প্রকৃতি প্রতি ভালোবাসার কারনে দলীয় রাজনীতির চেয়ে পরিবেশ রক্ষায় নিজেকে বেশি ব্যস্ত রাখতে শুরু করে।

সাটুরিয়ার আনাচে কানাচে বিভিন্ন ফলজ গাছের চারা রোপণ করে ব্যাক্তিগত অর্থায়নেই।

কিন্তু মহামারী করোনা শুরু হওয়ার পরে আবারো বদলে যায় তাঁর কাজের গতিপথ। রাজধানীতে বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে চলে যায় নাড়ির টানে সাটুরিয়ায় মেঠোপথে। শুরু হয় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনা তৈরির কাজ। ব্যাপকভাবে মাস্ক,সাবান,ডেটল,পিপিই এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু করে নিজেরা পকেটের টাকা থেকে।

এরই ধারাবাহিকতায় সাটুরিয়া উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএস ডাঃ মামুন-উর রসিদের হাতে ডাক্তার এবং নার্সদের জন্য হ্যান্ডগ্লাবস হস্তান্তর করে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে উপহার হিসাবে ৫০ টি পিপিই।

স্বাস্থকর্মী ও স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে বিতরণের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছেও হস্তান্তর করে আরো ৫০ টি উন্নতমানের পিপিই।

পর্যায়ক্রমে সাটুরিয়া ইউনিয়নের প্রায় তিনশত পরিবারের মাঝে চাল,ডাল,আটা,তেল,পিয়াজ,লবন ও আলুর প্যাকেট বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের হাতে বিতরন করে সাবেক ছাত্রনেতা রাজ্জাক হোসাইন রাজ।

শুধু ত্রাণসামগ্রী বিতরণেই থেমে থাকেনি তাঁর মানবিক কার্যক্রমগুলো।

ঈদ উপলক্ষ্যে প্রায় দুইশত পরিবারের মাঝে চাল,চিনি,তেল,সেমাইসহ ঈদ সামগ্রীও বিতরন করে নিজের হাতে।

এছাড়া ২০০ পরিবারের মাঝে উন্নতমানের একশত লুংগী ও একশত কাপড় বিতরন করে রাজ্জাক হোসাইন রাজ সাটুরিয়া ইউনিয়নে সবার মাঝে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

রাজ্জাক হোসাইন রাজ তাঁর সবুজ পরিবেশ আন্দোলনের পক্ষ থেকে নিজ অর্থায়নে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সাটুরিয়া উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্স ,থানা চত্তর ও বেশি কিছু মসজিদ ও মাদ্রাসায় উন্নত জাতের ফলজ গাছের চারা বিতরন করে।

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এবছর মানিকগঞ্জ জেলায় ১ লক্ষ বিভিন্ন জাতের ফলজ,বনজ ও ঔষদী গাছের চারা রোপন করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রাজ্জাক হোসাইন রাজ।  দ্রুততম সময়ে মানিকগঞ্জ জেলায় ৩ লক্ষ গাছের চারা রোপন ও বিতরনের কাজও এগিয়ে নিচ্ছে নিজের অর্থেই।

এভাবেই সাটুরিয়ার ইউনিয়নে গণ মানুষের কাছে সাটুরিয়ার মানিক এবার মানবতার ফেরিওয়ালা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।

রাজ্জাক হোসাইন রাজের সাথে তাঁর মানবিক কাজ নিয়ে কথা বলতে চাইলে সে জানায়, “ আমি নিরবে কাজ করতেই বেশি আগ্রহী।”

তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে প্রশ্ন করলে সদা হাস্যজ্জল এই তরুন জননেতা বলেন, “ সাটুরিয়া মানুষের জন্য নিজের জীবনের সবটুকু বিলিয়ে দিতে চাই। এভাবে বেঁচে থাকতে চাই মানুষের ভালোবাসা নিয়ে।”