সংক্রমণের ক্ষমতা বাড়ছে করোনার

দেশে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়াল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এ বছর জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় শিকাগো শহরে। চীনে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল তারও কয়েক সপ্তাহ আগে। চীনের সেই ভাইরাস আর শিকাগোতে সর্বপ্রথম শনাক্ত হওয়া ভাইরাসের জিনোম একই ছিল। তবে সম্প্রতি নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফেইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এজোন ওজের স্থানীয় রোগীর শরীর থেকে নেওয়া ভাইরাসের জেনেটিক কাঠামো পরীক্ষা করে ভিন্নতা পেয়েছেন। এমন অন্তত চারটি গবেষণার সূত্রে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, জিনগত এই রূপান্তরের ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা বেড়েছে। অবশ্য এখনও স্বীকৃত কোনও জার্নালে এসব গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়নি।

ওইসব গবেষণা অনুযায়ী, সংক্রমণের ক্ষমতা বাড়লেও এই ভাইরাস আক্রান্তকে আরও বেশি অসুস্থ করে তোলার মতো কোনও ক্ষমতা অর্জন করেনি। বিজ্ঞানীরা তাই জোর দিচ্ছেন  ভাইরাসের মূল জিনোমের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে। যেন রূপান্তরিত জিনোমের ক্ষেত্রেও সেই ভ্যাকসিন কাজ করে।

গবেষকদের দাবি, করোনাভাইরাসের জেনেটিক পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্পাইক প্রোটিনের ওপর প্রভাব পড়া। এ স্পাইক প্রোটিন হলো ভাইরাসের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। এর মাধ্যমে এসিই২ নামক শ্বাসতন্ত্রের কোষে প্রবেশ করতে পারে ভাইরাসটি। স্পাইক প্রোটিন যত বেশি কার্যকর হবে, তত সহজে ভাইরাস তার বাহকের শরীরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে।

চীনের উহানে যখন ভাইরাসটি প্রথম ছড়ায়, তখন সার্স কভ-২ নামক করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন আগে থেকেই কার্যকর ছিল। সার্স কভ-২ এর স্পাইক প্রোটিনের দুইটি অংশ আছে। স্ক্রিপস রিসার্সের ভাইরোলজিস্ট হায়েরিয়ুন চোয়ে বলেন, চীনে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের যে সংস্করণ দেখা গিয়েছিলো, তা প্রায়ই ভেঙে পড়তো। ত্রুটিপূর্ণ এ স্পাইক প্রোটিনের কারণে বাহকের কোষে প্রবেশ করতে ভাইরাসটির বেগ পেতে হয়।

একটি প্রক্সি ভাইরাস ব্যবহার করে এর জিনের দুই ধরনের সংস্করণ নিয়েই গবেষণা করেন বিজ্ঞানীরা। চোয়ে ও তার সহকর্মীরা দেখেছেন, জি ভ্যারিয়েন্ট সমৃদ্ধ ভাইরাসগুলোতে অনেক বেশি স্পাইক প্রোটিন আছে। আর এদের স্পাইক প্রোটিনের বাইরের অংশ ভেঙে যাওয়ার সম্ভানা কম। এর মধ্য দিয়ে ভাইরাসটি ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসের মূল জিনোমের এই পরিবর্তনের কারণে রোগীর অবস্থা যে আরও খারাপ হয়ে পড়ে তা নয়। এমনও নয় যে ডি ভ্যারিয়েন্ট থাকা রোগীদের শরীর থেকে নেওয়া অ্যান্টিবডিতে যে ভাইরাসটি বিপরীত আচরণ করে। এজন্য তারা আশাবাদী, ভাইরাসের মূল জিনোমের ওপর ভিত্তি করে যে ভ্যাকসিন তৈরি করা হচ্ছে, তা রূপান্তরিত ভাইরাসের বিরুদ্ধেও কার্যকর হবে।

চোয়ে এবং তার দলের করা গবেষণার পাণ্ডুলিপিটি বায়োরজিভ নামক ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। মূলত কোনও গবেষণা প্রতিবেদন স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশের আগে এ ওয়েবসাইটে তা পোস্ট করতে পারেন বিজ্ঞানীরা।