গণপূর্তের আলোচিত মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুদকে ঠিকাদারের অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক ; অল ক্রাইমস ডট টিভি:

গণপূর্ত অধিদফতরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। সোমবার (১৪ ‍সেপ্টেম্বর) এ লিখিত অভিযোগ করেন গণপূর্ত ঠিকাদার সমিতির পক্ষে মো. মোশাররফ হোসেন।

দুদকের অভিযোগে মোশাররফ হোসেন বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদের অনিয়ম ও সীমাহীন দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গণপূর্তের সকল ঠিকাদার ব্যবসায়ী। পুরো অধিদপ্তরে তার পরিচিতি রয়েছে ‘ফিফটিন পার্সেন্ট’ নামে। বর্তমানে প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে এই হারে কমিশন নিয়ে থাকেন তিনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও গণপূর্তমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির কোন তোয়াক্কা করেন না মোসলেহ উদ্দিন আহম্মেদ।

২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদ ভবনে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন আহম্মেদ। সে সময় নিয়মবহির্ভূতভাবে সরকারি টাকা খরচ করে আলোচিত হন। তহবিল নয়-ছয়ের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে এবং সংসদীয় কমিটির তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। কথিত যুবলীগ নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হিসেবে পরিচিত এই মোসলেহ উদ্দিন।

বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে সংসদ ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব পালন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করা মোসলেহ উদ্দিন তার ব্যক্তি জীবনে গড়েছেন অঢেল সম্পদের পাহাড়। ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় অস্ট্রেলিয়া, কানাডায় কিনেছেন আলিশান বাড়ি, ঢাকা ও কুমিল্লায় একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল গাড়ি এবং বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে তার। এছাড়া গত অক্টোবরে চট্টগ্রাম গণপূর্ত জোন থেকে ৩ কোটি টাকা খরচ করে ঢাকা গণপূর্ত জোনে বদলি হয়ে আসেন মোসলেহ উদ্দিন।

বিসিএস ১৫তম ব্যাচের প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন ১৯৯৫ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগ দেন। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ঢাকা শেরেবাংলা নগরে দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর শেরেবাংলা নগর ও দীর্ঘ সময় প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে সমন্বয় বিভাগে ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চট্রগাম জোনেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সব জায়গাতেই দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতন এলাকা থেকে গ্রেফতার হন জি কে শামীম। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জি কে শামীম যাদের নাম বলেছিল, তাদের মধ্যে মোসলেহ উদ্দিনের নাম ছিল। যা তৎকালীন সময় প্রথম সারির গণমাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, মোসলেহ উদ্দিন ছাত্রজীবনে ছাত্র দলের নেতা ছিলেন। বিএনপি ও চারদলীয় জোট সরকার আমলে তিনি বিএনপিপন্থী প্রকৌশলী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে সে সব ছাপিয়ে তিনি এখন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থক পরিচয় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সবাইকে দাবিয়ে রাখেন। বর্তমানে তিনি গণপূর্তের রাজা বললেও ভুল হবে না। কেননা বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমও তার অবৈধ অর্থের কাছে অসহায়। তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস হারিয়ে ফেলেছে সবাই। ইতিমধ্যে তিনি তার ক্ষমতা অসংখ্য নজির স্থাপন করেছেন। তার অবৈধ টাকার ক্ষমতার বলে যে কাউকে সহজেই ম্যানেজ করতে সক্ষম তিনি।

এই মোসলেহ উদ্দিনকে এর আগেও গত ১৩ জানুয়ারি তলবি নোটিশ পাঠিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সে মামলাটিও দুদকে তদন্তাধীন রয়েছে।

অষ্টম জাতীয় সংসদে অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তে অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়াকে (ডেপুটি স্পিকার) প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। ওই কমিটি গণপূর্ত বিভাগের ৩ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল ওই কমিটি কিন্তু সুপারিশ অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি গণপূর্ত অধিদপ্তর। তদন্ত কমিটির সুপারিশে সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট আখতার হামিদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা হলেও তিন প্রকৌশলী ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এই তিন প্রকৌশলী একজন হলেন- বর্তমান গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদ। এখন তিনি প্রধান প্রকৌশলীর পদ পেতেও মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলেও কানাঘুষা চলছে।

এ ব্যাপারে গণপূর্ত অধিদফতরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।