করোনা ঝুঁকিতে পুলিশের ২২ হাজার প্রবীণ সদস্য!

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রবীণ পুলিশ সদস্যদেরকেও সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা

দেশের বিভিন্নস্থানে কর্মরত ২২ হাজারেরও বেশী প্রবীন পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন করোনা ঝুঁকিতে। যদিও এই সদস্যদের জন্য বাড়তি সতর্কতামূলক কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা দায়িত্ব পালনের চেস্টাও করছেন।

হাবিবুল্লাহ্ মিজান,সম্পাদক,অল ক্রাইমস টিভি

দেশের বিভিন্নস্থানে কর্মরত প্রায় ২২ হাজারেরও বেশী প্রবীন পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন করোনা ঝুঁকিতে। যদিও এই সদস্যদের জন্য বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা দায়িত্বপালনের চেস্টাও করছেন।

করোনাকালে প্রবীনদের বাড়তি যত্ন নেয়ার পরমার্শ দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। এমন পরিস্থিতিতে এসব প্রবীন পুলিশ সদস্যদের দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার ঝুকি রয়ে গেছে।

সূত্রমতে, ২ লক্ষ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী রয়েছেন ২২ হাজার ৪১৩ জন। দৈনিক দুই শিফটে তাদেরও ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা ডিউটি করতে হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে তাদের কম ডিউটি দেওয়ার পাশাপাশি আলাদা যত্ন নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, একক পেশা হিসেবে করোনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত বাংলাদেশ পুলিশ,  তেমনি পুলিশে সুস্থ হয়ে ওঠার হারও কিন্তু অনেক বেশি। এ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ শতাংশ পুলিশ সদস্য সুস্থ হয়ে পুনরায় দেশের সেবায় নিযুক্ত হয়েছেন। করোনাকালে যারা যত বেশি জনগণের কাছে গিয়ে সেবা দেবে, তাদের সংক্রমিত হওয়া ঝুঁকি তত বেশি থাকে। করোনাযুদ্ধের শুরু থেকেই বাংলাদেশ পুলিশের দুই লক্ষাধিক সদস্য সর্বতোভাবে মানুষের কাছে গিয়ে সেবা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ করে চলছে। এ কারণে পুলিশে সংক্রমণও তুলনামূলকভাবে বেশি হচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিতে সদাপ্রস্তুত বাংলাদেশ পুলিশ।

তিনি বলেন, করোনাযুদ্ধে মাঠ পর্যায়ের প্রধান অগ্রসেনানী বাংলাদেশ পুলিশ। এ কারণে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সবার আগে পুলিশকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ লড়াইয়ে দেশের কল্যাণ ও মানুষের নিরাপত্তা, সেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ২৪ জন প্রিয় সহকর্মীকে হারাতে হয়েছে। তবুও একবিন্দু দমে না গিয়ে শক্ত মনোবল আর পূর্ণ উদ্যমে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ পুলিশ। প্রবীণ পুলিশ সদস্যদেরও সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, এ পর্যন্ত কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২৪ জন পুলিশ সদস্য। এরমধ্যে ৮ জনের বয়স পঞ্চাষোর্ধ। ১১ জন রয়েছেন  চল্লিশষোর্ধ। এরবাহিরে আরো ৫জন পুলিশ সদস্য কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, যাদের বয়স চল্লিশের নিচে।


দেশের বিভিন্নস্থানে কর্মরত ২২ হাজারেরও বেশী প্রবীন পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন করোনা ঝুঁকিতে। যদিও এই সদস্যদের জন্য বাড়তি সতর্কতামূলক কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা দায়িত্ব পালনের চেস্টাও করছেন।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে, দুর্বল হয়ে পরে। তাই করোনাভাইরাসের প্রকোপের সময় প্রবীণদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রবীণ সদস্যদের নিয়মিত মেডিকেল চেকআপে এবং অত্যাবশ্যকীয় না হলে ডাক্তার দেখাতে যাওয়াও ঠিক হবে না। এ সময় তাদের বাড়ির বাইরে যাওয়াই উচিত নয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমন থেকে প্রবীনদের নিরাপদ রাখতে নিতে হবে বাড়তি যত।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা জানা যায়, বর্তমানে বাহিনীতে কর্মরত ২ লক্ষ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী রয়েছেন ২২ হাজার ৪১৩ জন। মাঠ পর্যায়ে কমর্রত প্রবীন পুলিশ সদস্যরা জানান, দৈনিক দুই শিফটে তাদেও ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা ডিউটি করতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে বিশেষ ডিউটি যুক্ত হয়ে ২০ ঘন্টাও হয়ে যায়। বর্তমানে আইনর্শঙ্খলা রক্ষার নিয়মিত ডিউটির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে কভিড-১৯ মোকাবেলায় নানা ধরণের সচেতনতা মূলক কার্যক্রম। সবমিলে করোনার এই সময়ে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ডিউটির চাপ বেড়েছে বলে দাবি প্রবীন পুলিশ সদস্যদের।

পুলিশ সদর দপ্তরের হিসেব মতে, পুলিশ সদস্যদের মাঝে প্রথম কভিড-১৯ শনাক্ত হয় গত ২৫ এপ্রিল। আর গত ২৮ এপ্রিল এ রোগে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।  এ পর্যন্ত সারা দেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার একজন, পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার ৮ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার ১৯ জন, সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ২০ জন, ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার ৯৮ জন। বাকিরা সবাই এসআই, এএসআই এবং কনস্টেবল।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় দেশজুড়ে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেও দিন-রাত নিরলসভাবে কাজ করতে হয়েছে পুলিশ সদস্যরা। সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, বিদেশফেরতদের হাতে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার অমোচনীয় সিল লাগানো এবং পরবর্তী সময়ে তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, এমনকি কভিড-১৯ আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির মরদেহ পরিবহন থেকে সৎকারের কাজ করতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের।

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডা. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুসও করোনাকালে প্রবীনদের বিশেষ যত্ন নেয়ার তাগিদ দিয়েছে। তিনি বলেছেন, ভাইরাস থেকে প্রবীণদের রক্ষা করতে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে। তারা আমাদের পরিবার ও সমাজের মূল্যবান সদস্য। তারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে গুরুতর অবস্থা হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে, দুর্বল হয়ে পরে। তাই করোনাকালে প্রবীনদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। আইজিপির নির্দেশে অসুস্থ পুলিশ সদস্যদের দেখাশোনার জন্য গঠন করা হয়েছে ‘বিশেষ টিম’। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল ছাড়াও রাজধানী এবং বিভাগীয় শহরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বেসরকারি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।